সোনাগাছির ইতিহাস | history of Sonagachi .
সোনাগাছির ইতিহাস | history of Sonagachi .
সোনাগাছি। এশিয়ার সবচেয়ে বড় পতিতালয় যৌনপল্লী বা রেড লাইট এরিয়া। এখানে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার যৌনকর্মী কাজ করেন। প্রতিদিন তারা তাদের শরীরকে নিলামে তোলেন আর বিকিয়ে দেন নিজেদের শত স্বপ্ন স্বাদ আল্লাদকে। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন এই সোনাগাছির অবস্থান ভারতের কলকাতার একাংশে। কিন্তু কলকাতার মত একটি প্রসিদ্ধ শহর যা কিনা ভারতের ব্যবসা বানিজ্য শিক্ষা, সংস্কৃতি অর্থনীতির প্রান কেন্দ্র, এমন একটি শহরে সোনাগাছির মত এরকম একটি জায়গা কিভাবে তৈরি হলো । কে বা কারা প্রথম তৈরি করেছিল এই জায়গাটি । এই জায়গাটির নাম সোনাগাছীই বা কিভাবে হল তার পুরো ইতিহাস জানাবো আজকের এই প্রতিবেদনে ।
আজকের প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র ইনফর্মেশন পারপাসে বানানো হয়েছে তাই কেউ ভুল ভাবে এই পপ্রতিবেদনটি বিচার করবেন না।
১৬৮৬ সালে একজন ইংরেজ বণিক হুগলী নদীর তীরে কলকাতা শহরের সূচনা করেছিলেন। ব্যবসা-বাণিজ্য শিক্ষা অর্থনীতি সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ এই শহরটি ছিল প্রথমে ভারতীয়দের দখলে । ১৬৯০ সালে ব্রিটিশরা ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসা করার অনুমোদন পায় । এরপর ব্রিটিশরা এই এলাকায় বিশাল দুর্গ নির্মান করে তাদের বাণিজ্য কুঠি গড়ে তোলে । এরপর বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৯৩ সালে সম্পূর্ণরূপে কলকাতার দখল নিয়ে নেয়। এক সময় ধীরে ধীরে গোটা ভারত বর্ষের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দখলে ।
আর সে সময় একটা কালচার ছিল যাকে বলা হয় বাবু কালচার। ১৮শ-১৯শ শতাব্দিতে এই বাঙালি বাবু সম্প্রদায় কলকাতার এই বিশেষ অঞ্চলে নিজেদের রক্ষিতা বা উপপত্নীদের প্রতিপালন করতেন। উপপত্নী হল যেই সমস্ত নারীদের সাথে এই বাবুদের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক থাকত। বেশিরভাগ অভিজাত বংশের পয়সাওয়ালা বাবুরা মাঝে মধ্যেই এই অঞ্চলে তাদের বানানো বাড়িতে এসে উপপত্নীদেরর সাথে সময় কাটাতেন। আর এসবের বিনিময়ে তারা উপপত্নীদের নিয়মিত টাকা দিত।
তবে সোনাগাছির পথ চলা শুরু ১৯ শতকে। সে সময় ব্রিটিশরা তাদের দখল করা নতুন নতুন জায়গাগুলো শাসন করার জন্য ইংল্যান্ড থেকে প্রচুর সংখ্যক কম বয়সি ইংরেজ সৈন্যদের নিয়ে আসেন । এদের মধ্যে অনেকেই তাদের দেশে অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা ভাল ছিল না । কিন্তু ভারতে এসে তারা প্রচুর টাকা-পয়সায় তাদের পকেট ভারী করতে থাকেন । তাদের বউ বাচ্চারা তো আর এদেশে থাকেনা। তখন তারা খুবই বিলাসিতায় লিপ্ত হয়ে পড়েন। নিজেদের চাহিদা মেটাতে তখন তারা এই অঞ্চলের রক্ষিতা বা উপপত্নীদের সাথে কিংবা কম বয়সী বিধবা মেয়েদের সাথে খুবই অল্প টাকার বিনিময়ে অনৈতিক সম্পর্ক করতেন। আর টাকা দিয়ে তারা যে সিস্টেমটি চালু করলেন এটাই এই অঞ্চলে যৌন ব্যবসার জন্ম দেয়। ।বলা হয় খানিকটা এই ভাবেই কলকাতা শহরে শুরু হয়েছে শরীরী ব্যবসা।
এখানে আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি,
এই দেহ ব্যবসা এটা কিন্তু নতুন কিছু নয় । ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় । আগেকার দিনে যতগুলো ব্যবসা ছিল তার মধ্যে একটি জনপ্রিয় ব্যবসা ছিল এই দেহ ব্যবসা । আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে প্রায় ২৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সুমিরের উরুক নামক একটি প্রদেশে এই ব্যবসা প্রথম পরিলক্ষিত হয়েছিল। তখনকার দিনে মন্দিরের সেবিকা বা দেবদাসীদের অনেকেরই পবিত্র একটি ব্যবসা ছিল এই দেহ ব্যবসা । সেখানে তাদের মধ্যে তিন ধরনের দেবদাসী ছিল। তখনকার সময়ে সুমিরে এই ব্যবসাটি প্রচুর পরিমাণে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যার ফলে এই ব্যবসাটি ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে ।তখন ইউরোপ থেকে ব্রিটিশদের হাত ধরে এই ব্যবসাটি সারা পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে ।
তবে এই জায়গাটির নাম সোনাগাছি কি করে হলো।
অধ্যাপক P T Nair রচিত বিখ্যাত বই The History of kalkatas streets থেকে জানা যায় ,যৌনপল্লীতে পরিণত হওয়ার আগে এই এলাকায় সানাউল্লাহ গাজী নামে একজন মুসলমান সাধু বাবা বসবাস করতেন । তার মৃত্যুর পর তার নাম অনুসারে এই জায়গা টির নাম সোনাগাজী হয় এবং পরবর্তীতে তা কাট ছাট হয়ে সোনাগাছি হিসেবে পরিচিতি পায়। সেই সানাউল্লাহ গাজী নামে সাধু বাবার মাজার এখনো ওই অঞ্চলে দেখা যায়।
ইতিহাস থেকে আরো জানা যায়। এই জায়গাটির জমিদার ছিলেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। আর এই জমিদারের তত্ত্বাবধানেই জায়গাটি যৌনপল্লীতে রূপ নিয়েছিল। সেই আমলে বিখ্যাত বাঙালিরা বাবু সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল। আর বেশিরভাগ বাবুদের একাধিক উপপত্নী থাকাটা তখনকার সময়ে ছিল বাবু কালচার। সেসময় বাবুদের বারবণিতা বিলাস নাকি ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু তাদের তো আর ঘরের বউদের সাথে রাখা যায় না।। তাই তখন তারা নতুন নতুন বাড়ি বানিয়ে উপপত্নীদের রেখে আসত বর্তমানের এই সোনাগাছিতে। সেই সময় এই অঞ্চলে বেশকিছু বাড়ি নির্মিত হয়েছিল।
শুরুটা যেভাবেই হোক না কেন বর্তমানে এই জায়গার পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। কিছুদিন আগের এক হিসাব অনুযায়ী এখানে প্রায় ১৫ হাজার যৌনকর্মী কাজ করেন। প্রতি বছর প্রায় ১০০০ থেকে ১২০০ জন মেয়ে এই ব্যবসায়ে নতুন করে যোগ দিচ্ছে। সোনাগাছিতে কর্মরত যৌনকর্মীরা সকলেই যে অভাবের তাড়নায় বা অবস্থার চাপে পড়ে এই পেশাতে নামতে বাধ্য হন তা কিন্তু নয়।
অনেকে নিজেদের স্বইচ্ছাতেই এই পেশায় আসেন। আবার কাউকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এখানে এনে বেচে দেওয়া হয়। তবে একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে। বাহিরের এলাকাগুলো থেকে পড়তে আসা অনেক ছাত্রীরা ও এক্সট্রা টাকার জন্য এই পেশাতে যুক্ত হচ্ছে। তারা বাড়ির লোকজন কে না জানিয়ে এই পল্লীতে দিনের পর দিন মাসের পর মাস নিজেদের শরীর বিক্রি করে যাচ্ছেন কিছু অর্থ উপার্জনের জন্য। তাই কিছুদিন আগে এখানকার কিছু ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় কিছু মেয়ে আত্মহত্যা করেছিল। এখানকার কর্মীরা বেশিরভাগই তাদের পেশার জগতে ছদ্মনামে ব্যবহার করেন । প্রতিদিন তাদের শরীর নিলামে ওঠে। 300 টাকা থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত এই দাম ওঠে থাকে।