কোন হুজুর ওয়াযে কত টাকা নেয় | বাংলাদেশের ১০ জন বক্তা

বাংলাদেশের ১০ জন বক্তা


বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ । এ দেশে প্রতি শীতের মৌসুমে ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই ওয়াজ কে কেন্দ্র করে ধর্মপ্রাণ মুমুসলমান দের মধ্যে তখন ব্যাপক আনন্দ কাজ করে। তখন এই সমস্ত আলেমদের আলোচনা শুনে অনেকেই নিজেদের পরিবর্তন করে ফেলে। আলেম-ওলামারা তাদের আলোচনার মাধ্যমে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তুলে ধরে। ইসলামের বাণী প্রচার করার কারণে এদের মধ্যে অনেকেই অন্য পেশায় কাজ করার সময় ও সুযোগ কোনোটাই পান্ না। আলেমদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল থেকে থেকে পাওয়া হাদিয়ার মাধ্যমেই তাদের জীবন পরিচালনা করে থাকে । 

বাংলাদেশের বিখ্যাত 10 জন আলেম ওলামাদের মধ্যে কে কত টাকা বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল থেকে কে কত টাকা হাদিয়া পেয়ে থাকেন ।

১০. আব্দুল্লাহ আল আমিন 


ওয়াজের ময়দানের তিনি খুবই পরিচিত একজন আলেম । তিনি অত্যন্ত সুরেলা কন্ঠে ওয়াজ করে থাকেন । তার কন্ঠ অনেকটা আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মত। অনেকে তাকে দ্বিতীয় সাঈদী হিসেবে চেনেন । তবে যতটুকু জানা যায় মাহফিল করার জন্য তিনি কোন প্রকার চুক্তি করেন না। মাহফিল কর্তৃপক্ষ যা দেন সেটা নিয়েই তিনি সন্তুষ্ট থাকেন। তবে সাধারণত হাদিয়া হিসেবে তাকে 50 থেকে 60 হাজার টাকাদেওয়া হয় । 

৯. মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী 


বাংলাদেশের আরেকজন জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী সাহেব। ওয়াজের ময়দানের তিনি ব্যাপক পরিচিত। তবে কিছু কাজের জন্য ইতিমধ্যে তিনি জনসাধারণের মাঝে সমালোচিত হয়েছেন । অনেকে তাকে হেলিকপ্টার হুজুর বলেও চিনে থাকেন। অনেকেই বলেন তিনি বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে যেতে বেশিরভাগ সময় হেলিকপ্টার ব্যবহার করে থাকেন তার দাম্ভিক কথাবাত্রা মানুষের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে । তবে ওয়াজের ময়দানে তিনি খুব ভালোভাবেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন । সঠিকভাবে জানা যায়নি তবে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে শোনা গেছে তিনি নাকি চুক্তি করে বয়ান করেন। প্রতি মাহফিলের জন্য তিনি নাকি ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন ।

৮. আল্লামা তারেক মনোয়ার 


বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মানের একজন ইসলামীক বক্তা আল্লামা তারেক মনোয়ার সাহেব । 

যখন ফেসবুক ইউটিউব ছিল না তখন ও এই আলেমেদ্বীন বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন । তিনি আরবি উর্দু ইংরেজি ভাষায় ওয়াজ করতে পারেন। এ পর্যন্ত তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওয়াজ করেছেন । ইতিমধ্যেই তার ওয়াজ শুনে অনেকেই মুসলমান হয়েছেন । এমনকি আল্লামা সাঈদী সাহেব তার কোন এক ওয়াজে বলেছিলেন আমার পরে কেউ যদি আন্তর্জাতিক বক্তা স্বীকৃতি পান তাহলে তারেক মনোয়ার ই পাবেন। ঠিক তাই হয়েছে দেশে-বিদেশে তার অনেক ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছে । মনোয়ার সাহেব ওয়াজ মাহফিল করতে কোন প্রকার চুক্তি করেন না ।। মাহফিল প্রতি তাকে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকাহাদিয়া দেওয়া হয়ে থাকে । 

৭৷ আব্দুল হাই মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ 


বর্তমান সময়ে তিনি একজন আলোচিত ইসলামিক ব্যক্তিত্ব। তিনি শিক্ষাজীবনে খুবই একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন তার স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে স্বর্ণ পদক পেয়েছিলেন । তিনি তিনবার তেলাওয়াতুল কোরআন প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ পদক পেয়েছেন। মেধাবী এই ইসলামী আলোচকের আলোচনা শুনে দেশের অনেক তরুণ সমাজ ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জন করেছে । তিনি অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় ইসলামিক আলোচনা করে থাকেন । তিনি সুশিক্ষায় শিক্ষিত একজন তরুন বক্তা ও ইসলামিক স্কলার্স। তিনি খ্যাতনামা ইসলামিক স্কলার্স মরহুম খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহয়ের সুযোগ্য ছাত্র ছিলেন । যতটুকু জানা যায় তিনি কোন মাহফিলের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন না। হাদিয়া হিসেবে কর্তৃপক্ষ যা দেন তাই নিয়ে থাকেন। তবে জানা যায় প্রতি মাহাফিলে হাদিয়া হাদিয়া হিসেবে তিনি 40 থেকে 50 হাজার টাকা নিয়ে থাকেন।

৬ শাইখ আহমাদুল্লাহ 


বিশ্ব বিখ্যাত একজন দিনের দায়ী শাইখ আহমাদুল্লাহ । সারাবিশ্বে তার পরিচিতি রয়েছে । র্তমানে তিনি আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে দেশে এবং বিদেশে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মাঝে ইসলামের জ্ঞান পৌঁছানোর কাজ করে যাচ্ছেন। এর আগে তিনি সৌদিআরবের পশ্চিম দাম্মাম ইসলামিক সেন্টারের সম্মানিত দায়ী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সভা-সেমিনারে ইসলামিক বিষয়ে লেকচার প্রদান করার পাশাপাশি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলেও ইসলামিক আলোচনা করে থাকেন ।। শায়খ আহমাদুল্লাহ কোরআন ও হাদিসের উপর গবেষণা করে সেই আলোকে আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশন এর ইউটিউব চ্যানেল ভিডিও প্রকাশ করে আসছেন। এ পর্যন্ত তিনি একশোর উপরে গবেষণালব্ধ আর্টিকেল প্রকাশ করেছেন। তার মাসিক আয় সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া না পেলেও প্রতিটি মাহফিল থেকে তাকে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা দেওয়া হয় জানা যায় । তবে তিনিও মাহফিলের জন্য কোন প্রকার চুক্তি করেন না ।

৫. মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী 


তিনি কওমি অঙ্গনের অন্যতম বিজ্ঞ আলেম দ্বীন । তিনি অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় সুরেলা কন্ঠে মানুষের মধ্যে ইসলামের বাণী তুলে ধরেন যা মুহূর্তেই মানুষের অন্তর কে নরম করে দেয়। সুরেলা কণ্ঠের জন্য তাকে বলা হয় সুলতানুল ওয়ায়েজ। তিনি যখন ওয়াজ করেন সুরে মত্ত হয়ে মানুষের চোখে তখন পানি চলে আসে আমল করতে ভেতরে ঢের ইচ্ছে জাগে। শীতের মৌসুমে তার চাহিদা ও দেশজুড়ে বেড়ে যায় । তবে যতটুকু জানা গেছে তিনিও ওয়াজ চুক্তিবদ্ধ হন না তবে তিনি প্রতিটি মাহফিল থেকে হাদিয়া পান 40 থেকে 50 হাজার টাকা ।

৪. আল্লামা বাসিত খান 


সময়ের আরেকজন বিজ্ঞ আলেম তিনি । কওমি আলেমদের মধ্যে ইলম ও আমলের দিক থেকে অন্যতম । একদিকে তার আমল আর একদিকে তার এলম তাকে করেছে অনন্য । কুরআন-সুন্নাহর কথাগুলো কতই না সহজ করে সাধারণ মানুষ ও এযুগেরর আলেমদের নিকট তুলে ধরেন। তিনি কোন মাহফিলের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন না। তবে ধারণা করা হয় প্রতিটি মাহফিল থেকে তাকে 40 থেকে 50 হাজার টাকা হাদিয়া দেওয়া হয়। ।

৩. আল্লামা মামুনুল হক 


সারাদেশে এখন একটি নাম আল্লামা মামুনুল হক। তিনি একাধারে একজন হাফেজ  মাওলানা ও মুফতী এবং শাইখুল হাদিস সাথে অর্থনীতিতে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিটও করেছেন এই বিজ্ঞ আলেমের দ্বীন । তাছাড়া একসময় আলোচিত ধর্মীয় নেতা ও সর্বপ্রথম বুখারী শরীফের বঙ্গানুবাদ কারি সাইকুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক এর চতুর্থ ছেলে মামুনুল হক। তিনিও শীতের মৌসুমে কওমি মাদরাসাগুলোতে ওয়াজ করে থাকেন। তার ওয়াজের বেশিরভাগ শ্রোতা হচ্ছে যুবকেরা। সত্য প্রচার করতে কখনো পিছপা হননা নির্ভীক এই আলেম। তিনিও ওয়াজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন না। প্রতি মাহফিলে  তাকে 50 থেকে 60 হাজার টাকা দেওয়া হয়ে থাকে । 

২. মুফতি আমির হামজা 


বর্তমানে তরুণদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন ইসলামিক আলোচক এই আমির হামজা । তিনি একাধারে একজন হাফেজ মুফতি এবং মুফাসসির। তিনি অত্যন্ত নম্র ও মৃদু হাসির মানুষ। শৈশব থেকেই তিনি খুব মেধাবী ছিলেন। অনেকেই তাকে বাংলাদেশের জাকির নায়েক বলে থাকেন। কারণ তিনি তার প্রতিটি বক্তব্যে কুরআন ও হাদিসের রেফারেন্স উল্লেখ করে থাকেন । তিনি বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে ওয়াজ করে থাকেন । যদিও তিনি কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে থাকেন  তারপরেও তার কথাগুলি সুস্পষ্ট।তারপর তার প্রতিটি বক্তব্যের সময় তিনি খুবই হাস্যজ্জল থাকেন । দেশের অন্যতম ইসলামীক ব্যক্তিত্ব হওয়া সত্ত্বেও তার ভিতরে কোন অহংকার নেই। তিনি কোরআনকে অত্যন্ত সুন্দর উপায় আলোচনা করে শ্রোতাদের কাছে ব্যাখ্যা করে তুলে ধরেন । মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী আর মুফতি আমির হামজার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তিনি কোরআনের মাহফিল থেকে যা কিছু পান তা দিয়েই জীবন অতিবাহিত করেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে প্রতিটি মাহফিল থেকে তিনি 40 থেকে 60 হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। 

১ ডঃ মিজানুর রহমান আজহারী 


বর্তমান সময়ের তরুণ শিশু কিশোর বৃদ্ধ এমনকি মহিলা সকলের হৃদয়ের স্পন্দন এই মিজানুর রহমান আজহারী । ইসলাম ধর্মের অনুশাসন মেনে চলেও নিজেকে স্মার্ট ভাবে উপস্থাপন করা যায় তার জ্বলন্ত উদাহরণ মিজানুর রহমান আজহারী । তার প্রতিটি তাফসির মাহফিলে যুবকদের ঢল নেমে আসে । তিনিও যুবকদের খুবই পছন্দ করেন। তাফসির মাহফিলে যুবকদের ভালো পথে চলার আহ্বান জানান তিনি । তাছাড়া খুবই অল্প সময়ে সুললিত কন্ঠে কুরআন-হাদীসের সহজ সাবলীল আলোচনা করে অসংখ্য মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তার গবেষণাধর্মী আলোচনার মাধ্যমে ।


তিনি বাংলা আরবি ইংরেজি ভাষায় খুবই দক্ষ যে কারণে বিভিন্ন দেশের মানুষ তার আলোচনা সহজে বুঝতে পারে । তার নামে ফেসবুকে একটি ভেরিফাইড পেজ ও ইউটিউবে একটি  অফিশিয়াল চ্যানেল রয়েছে । তার মাসিক আয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তাফসির মাহফিলে যেতে তিনি চুক্তিবদ্ধ হন না। হাদিয়া হিসেবে কর্তৃপক্ষ যখন যা দেন তাই নিয়ে থাকেন । তবে জানা যায় সাধারণত প্রতিটি মাহফিল থেকে তাকে 70 - 80 হাজার কিংবা ১ লাখ টাকা পররন্ত হাদিয়া দেওয়া হয়ে থাকে ।


আজকে বাংলাদেশের 10 জন বিখ্যাত আলেমদের সম্পর্কে আলোচনা করা হলো । এখানে আমরা আপনাদের জানাতে চেষ্টা করেছি যে কোন হুজুর প্রতি মাহফিল থেকে কত টাকা হাদিয়া পেয়ে থাকেন । তবে এই তথ্যগুলো কিন্তু সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল । তাই এইগুলো শতভাগ সঠিক বলে মনে করা ঠিক হবে না । তাছাড়া এই তথ্যগুলো আমরা বিভিন্ন সোর্স থেকে কালেক্ট করেছি ।। 


তো বন্ধুরা এই 10 জন বিখ্যাত আলেমদের মধ্যে আপনার প্রিয় আলেমকে তাই এখনই আমাদের কমেন্টস করে জানিয়ে দিন । আল্লাহ হাফেয ।



Next Post Previous Post
1 Comments
  • নামহীন
    নামহীন ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ এ ৫:১২ PM

    মিজানুর রহমান আজাহারী

Add Comment
comment url