তারাবির তারাবির নামাজ কত রাকাত
তারাবীহ নামাজ কয় রাকাত?
তারাবীহ নামায ২০ রাকাত। যারা ৮ রাকাত বলে তাদের কথা সঠিক নয়। আহলে হাদিস বা লামাযহাবী সম্প্রদায় ৮ রাকাত তারাবীহের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য এই মতের নেতৃত্ব দেয়।
*সন্দেহ নিরসনের জন্য বুখারী ও মুসলিম শরীফে ৮ রাকাত বা সংশ্লিষ্ট হাদীস এবং এর সঠিক অর্থ নিচে দেওয়া হল।
প্রথম হাদীসঃ-
আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান থেকে বর্ণিতঃ তিনি আয়েশা (রাঃ)-কে রমজানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি উত্তর দিলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান ও অন্যান্য মাসে বিতির সহ এগারো রাকাত পড়তেন।
(বুখারী শরীফ এইচ. নং 1148)
দ্বিতীয় হাদীসঃ
ইয়াহইয়া ইবনে আবু সালামা (রাঃ) বলেনঃ আমি আয়েশা (রাঃ)-কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর রাতের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি উত্তরে বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তের রাকাত নামায পড়তেন। প্রথমে আট রাকাত পড়তেন, তারপর বিতির পড়তেন, তারপর দুই রাকাত নামায পড়তেন।
(মুসলিম শরীফ - হা. নং 1824)
এই হাদিস অনুসারে লা মাযহাবী সম্প্রদায় - তারাবীহ - ৮ রাকাতের উপর প্রমাণ পেশ করে।
উপরোক্ত হাদীসগুলোর উত্তরঃ-
প্রথম উত্তরঃ আয়েশা (রাঃ) হতে উপরোক্ত দু’টি হাদীস যেমন সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে, তেমনি মুসলিম শরীফে আয়েশা (রাঃ) থেকে দশ রাকাতের হাদীসও রয়েছে। যেমন:
হাদিস:-
কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি আয়েশা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে দশ রাকাত নামায, এক রাকাত বিতির এবং ফজরের দুই রাকাত সুন্নত সহ, মোট তের রাকাত নামায পড়তেন।
(মুসলিম শরীফ - হা. নং 1826)
এমনকি আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসগুলো দেখলেও বোঝা যায় যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রাতের নামায পড়তেন- কখনো ১১ রাকাত, কখনো ১৩ রাকাত, কখনো ৯ রাকাত, আবার কখনো ৮ রাকাত। তাই আয়েশা (রাঃ) এর হাদীস দ্বারা কোন সংখ্যা উল্লেখ করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
দ্বিতীয় উত্তর:-
আসলে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসগুলো তাহাজ্জুদের সাথে সম্পর্কিত, তারাবীহ নয়। তাই হাদীস লেখকগণ তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে এ ধরনের হাদীস উল্লেখ করেছেন, তারাবির অধ্যায়ে নয়।
তৃতীয় উত্তর:-
তারাবি ৮ রাকাত হওয়ার পক্ষে যে হাদিস পেশ করা হয়েছে তা আহলে হাদিসরা আমল করে না। কারণ হাদিসে রমজান ও অন্যান্য মাসের উল্লেখ আছে, কিন্তু তারা তাদের হাদিস অনুযায়ী অন্য মাসে তারাবীহ পাঠ করেন না। শুধু রমজান মাসেই পড়ে।
বিশ রাকাত তারাবির দলিলঃ
হাদিস নং-১৬৬:
সায়ির ইবনে ইয়াযিদের হতে বর্ণিত আছে যে, সাহাবা গুন উমর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে রমজান মাসে বিশ রাকাত তারাবীহ পড়তেন।
(বায়হাকী শরীফ-বি: 2/496 হা. নং 4617)
হাদিস নং-২৪০।
ইয়াজিদ ইবনে রুমান থেকে বর্ণিত, উমর (রাঃ)-এর যুগে সাহাবায়ে কেরাম বিতির সঙ্গে তেইশ রাকাত তারাবীহ পড়তেন। (মুওয়াত্তা মালেক খ: 1 পৃ. 115)
হাদিস নং- 3:
আতা ইবনে আবী রাবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আমি সাহাবীদেরকে বিতির সাথে তেইশ রাকাত তারাবী পড়তে দেখেছি (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ-৫/২২৪)
(উল্লেখিত সকল হাদীস সহীহ)
অগণিত হাদীস দ্বারা এটাও স্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে তারাবীহ নামায হল ২০ রাকাত যার উপর খোলাফায়ে রাশেদীন, সকল সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, সালাফে সালেহীন গুন একত্রে আদায় করেছেন। আর চার মাযহাবের ইমামগণও এ বিষয়ে একমত হয়েছেন।
তাই যারা ৮ রাকাত তারাবির কথা বলে, তারা সাদাসিধে মুসলমানদের অন্তরে বিভ্রান্তির বিষ ঢেলে ইসলামকে বিতর্কিত করতে চায়।
আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।