সিলেটে বন্যার মধ্যে চলছে হরিলুট
সিলেটে বন্যার মধ্যে চলছে ডাকাতি
দেশের
অনেক ভাটি অঞ্চল যখন তীব্র দাবদাহে পুড়ছে , তখন সিলেট ভাসছে বন্যার জলে।
সেখানে বিরাজ করছে ভয়াবহ এখন বন্যা পরিস্থিতি। মাত্র 24 ঘন্টায় 972
মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এখানে। যা গত 122 বছরের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ
বৃষ্টিপাত। আর তাতেই সিলেট বিভাগের 80 শতাংশ এলাকা পানিতে ডুবে গেছে।
পানিবন্দি হয়ে মানুষ মারা যাওয়ার অবস্থা। মানুষ কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে
পারছে না। পাগলের মত হয়ে মানুষ যে যেদিকে পারে ছুটছে। এ যেন কেয়ামতের আগাম
বার্তা জানান দিচ্ছে।
এদিকে
10 কিলোমিটারের পথ যেতে অনেক অসাধু লোকেরা নৌকার ভাড়া হাকাচ্ছে ৪০ থেকে ৫০
হাজার টাকা। এ যেন হেলিকাপ্টারে চড়ার ভাড়া। 10 টাকার মোমবাতি এখন কোথাও
কোথাও 100 টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 30 টাকার ডালভাতের দাম এখন ২৫০-৩০০ টাকা।
40 টাকার ডিমের হালি কোথাও কোথাও 250 পর্যন্ত টাকা রাখা হচ্ছে। ৬০ টাকার ১
কেজি চিড়া রাখা হচ্ছে ২০০-৩০০ টাকা। ত্রাণ নিয়ে আসা লোকজন যে হোটেলে থাকবে
তার ব্যবস্থাও নেই। দেড়শ টাকার হোটেল ভাড়া চাওয়া হচ্ছে বিশ হাজার টাকা।
এরই
মধ্যে শুরু হয়েছে আবার ডাকাতি। আমরা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা থেকে জানতে
পেয়েছি সিলেট-সুনামগঞ্জ সহ আরো অন্তত 16 টি স্থানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ
যেন এক হরিলুট উৎসব চলছে সিলেটে।
সিলেট সুনামগঞ্জে হচ্ছেটা কি। বন্যায় সর্বস্ব হারানো মানুষ গুলোকে বে-কায়দায় ফেলে ফায়দা লুটছে একদল মানুষ নামের অমানুষ। আরে ভাই বিপদে তো বাঘও মহিষের ওপর আক্রমণ করে না । আর এরা তো বিপদে পরা কিছু জলজ্যান্ত মানুষ। আর যারা কিনা এসব অসৎ উপায় অবলম্বন করছেন তারা কি আদতেও এই দেশের নাগরিক। অসহায় মানুদের হৃদয়ের আর্তনাদ কি তাদের কর্ণকুহরে পৌঁছয় না। ভাবতে
সালুটিকর
থেকে কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল গ্রামের দূরত্ব মাত্র 10 কিলোমিটার।
স্বাভাবিক সময়ে এই পথটুকু নৌকায় যেতে 800 থেকে 1000 টাকা খরচ হয়। এখন এই
10 কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে মাঝিরা ভাড়া চাচ্ছে 50000 টাকা। ব্যথায় কাতর
অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে সিলেট শহরে আনতে মারুফ নামের এক ব্যক্তি 40 হাজার
টাকা নৌকা ভাড়া দিতে রাজি হলেও কোন নৌকা আসতে রাজি হয় নি। শেষ পর্যন্ত
অবশ্য কি হয়েছে সেটা অবশ্য যায়নি। এদেশের কিছু কিছু মানুষের অবস্থা এখন
এমন হয়ে গেছে যে, তারা যদি জানে যে দুদিন কেয়ামত হবে, তাহলে তারা হয়ত
কাফনের কাপড়ের দামও বাড়িয়ে দেবে।
অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ নিয়ে যেতে চাইছেন তবে চড়া নৌকা ভাড়ার কারণে যেতে পারছেন না। এটাই এখন সিলেট সুনামগঞ্জের বন্যার আড়ালের চিত্র ।
সবচেয়ে কষ্টদায়ক ব্যাপার কি জানেন নেটওয়ার্ক আর বিদ্যুৎ না থাকায় বাবা জানেনা ছেলের খবর আর ছেলে জানেনা বাবার খবর। মা জানেনা যন্তানের খবর। ঘনিষ্ঠজনেরা বেঁচে আছেন কিনা সে খবর টুকুও জানার কোন উপায় নেই। এ যেন এক বিভীষিকাময় সময় পার করছে সিলেট সুনামগঞ্জের মানুষগুলো।
মাত্র 24 ঘণ্টার বৃষ্টিতে সিলেটের প্রায় ৮০% এলাকা ডুবে গেছে পানির নিচে। চৌহাট্টার শহীদ মিনার সবচেয়ে উঁচু জায়গা। সেখানেও পানি উঠে গেছে। ইতিমধ্যেই পানি উঠে গিয়েছে হযরত শাহাজালাল রহমাতুল্লাহ আলাইহির মাঝারে। পানিতে তলিয়ে গেছে সিলেট বিমানবন্দরও।
ছোট
বাচ্চা বৃদ্ধ নিয়ে ভয়াবহ অবস্থায় কোথাও সরে যাওয়ারও সুযোগ নেই । এদিকে
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বন্যাকবলিত মানুষজন বলছে
2004 সালের বন্যাতেও তাদের এলাকায় এত পানি ওঠেনি। এখানকার মানুষের খাবারের
পানি আনতে হচ্ছে সাঁতরে গিয়ে ইউনিয়নের শেষ মাথায় একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
থেকে। অধিকাংশ মানুষের বাড়ির ধানের গোলাও তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। কদিন
পর যখন পানি নেমে যাবে এই অঞ্চলের প্রায় সব মানুষই তখন চরম খাদ্য সংকটে
ভুগবে। আর এটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর সিলেট ও সুনামগঞ্জের পানি
কমতে শুরু করলে ওই সময়ে দেশের মধ্যাঞ্চলে বন্যা দেখা দেবে। তখন আবার কি হয়
আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানে।
বর্তমানে দেশের 10 জেলা 64 টি উপজেলা বন্যা কবলিত । এসব এলাকার মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে বলা হচ্ছে 122 বছরের ইতিহাসে সিলেট-সুনামগঞ্জ এমন বন্যা হয়নি। এই মুহূর্তে সিলেটের পাশে দাঁড়ানো গোটা বাংলাদেশের দায়িত্ব। আসুন আমরা যার যার অবস্থান থেকে সিলেটের পাশে দাঁড়ািই। বাড়িয়ে দেই সহানুভুতির হাত।
উল্লেখ্য
এর আগে গত এপ্রিলে ২০২২ বন্যায় তলিয়ে যায় সিলেটসহ আশপাশের হাওর এলাকার সকল
ফসল ও আবাদি জমি। এর মাসখানেক না যেতেই সিলেটে আবারও দেখা দিয়েছে বন্যা।
এবার বন্যা এসেছে আরো ভয়ংকর রূপে। তলিয়ে গেছে প্রায় পুরো সিলেট।
সুনামগঞ্জেরও ৯০ ভাগ এলাকাই এখন জলের নিচে ডুবে আছে।
এখন স্বাভাবিকভাবেই একটা প্রশ্ন আসে বারবার কেন সিলেটে বন্যা হচ্ছে? বন্যা কেন এত তীব্র আকার ধারণ করছে? এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেটের প্রধান নদীগুলো বিশেষত সুরমা, কুশিয়ারার তলদেশ পলি পরে ভরাট হয়ে যাওয়া, নগর ও এর আশপাশের এলাকার বিভিন্ন জলাশয় ভরাট, দখল হওয়া এবং সিলেটের উজানে মেঘালয়ে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণেই এই বন্যা।
এতে বৃষ্টির পানির দ্রুত বস্তি ও শহর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। হাওর এলাকায় অবকাঠামোসহ নানা কারণে বাড়ি নামতে বাধ্য পাচ্ছে হাওরে নানা অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে নদীগুলো নাব্যতা হারিয়েছে । এতে পানির দ্রুত নামতে পারছে না। এছাড়া সুনামগঞ্জ ও সিলেটের পানি বের হয়ে যাওয়ার পথে অনেক কমে গেছে। পানি জমা থাকার জায়গা গুলো কমে গেছ…হাওরের পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে ।পাহাড়-টিলা গুলো কিন্তু পানি শোষণ করে রাখে অথচ নির্বিচারে সিলেটে পাহাড় টিলা কাটা চলছে । পুকুর ভরাট চলছে এসব যাচ্ছেতাই কর্মের ফল ভোগ করছে লক্ষ লক্ষ মানুষ।
অনেকেই সিলেটের ব্ন্যার পরিস্থিতি জানার জন্য নিচের বাক্যগুলো লিখে গুগলে সার্চ করে থাকে।
সিলেটে বন্যার কারণ,সিলেটের বন্যা নিয়ে প্রতিবেদন,সিলেটে বন্যা হওয়ার কারণ,সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির ছবি,সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি ২০২২,সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি ভিডিও,সিলেটে বন্যার খবর,সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি আজকের,