পদ্মা সেতুতে ভারতের কি লাভ হবে
পদ্মা সেতুতে ভারত কি লাভবান হবে
বিশ্বের সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থায়নে করে ফেলল পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সব থেকে বড় সেতু। সেতুর সক্ষমতার বিচারে এটি বর্তমান পৃথিবীর সেতুর তালিকায় রয়েছে এক নম্বরে । এসব নিয়ে অন্য একদিন আলোচনা করা যাবে। আজ আলোচনা করব কিভাবে পদ্মাসেতু শুধু বাংলাদেশের না ভারতের অর্থনীতিতেও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে ।
কিভাবে পদ্মা সেতুতে ভারত লাভবান হবে
পদ্মা সেতু হলে দক্ষিণবঙ্গের 21 টি জেলা যুক্ত হবে ঢাকার সাথে। এসব জেলার জিডিপি প্রতি বছর দুই শতাংশের বেশি হারে বৃদ্ধি পাবে। বরিশালের পেয়ারা থেকে শুরু করে ফরিদপুরে খেজুরের গুড় সব কিছুই খুব সহজে চলে আসবে ঢাকায়। পাশাপাশি ঝিনাইদহ মাগুরা যশোরের কাঁচা শাকসবজি চার থেকে পাঁচ ঘন্টা চলে আসবে ঢাকায়।
দক্ষিণবঙ্গের.কৃষক কিংবা ব্যবসায়ীদের পদ্মার পাড়ে আর ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হবে না ফেরির আশায় । দেখতে হবেনা আর যে নিজেদের অনেক কষ্টের ফসল পদ্মার পাড়ে নষ্ট হয়ে যেতে। পদ্মা সেতু হলে শুধু 21 টি জেলারই শাকসবজি কাঁচামাল ঢাকা আসবে না এই সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বাণিজ্য হার বেড়ে যাবে কয়েক শতাংশের বেশি হারে। মংলা সমুদ্র বন্দর তখন পুরোপুরি কাজে লাগবে।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি সিংহভাগ হয়ে থাকে মংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে নদীপথ। বর্তমানে প্রায় 400 টিরও বেশি পণ্যবাহী ট্রাক ভারত থেকে নদীপথে মংলা সমুদ্রবন্দরে আসে। এই বন্দরে প্রতিদিন.কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য হয়ে থাকে দুই দেশের মধ্যে। পদ্মা সেতু হলে ভারত এবং বাংলাদেশের বাণিজ্যের দুয়ার খুলে যাবে। যেহেতু বাংলাদেশ ভারত থেকে বেশি আমদানি করে থাকে তাই পদ্মা সেতু হলে বাংলাদেশে আরও বেশি আমদানি করবে ভারত থেকে। তাই ভারত পদ্মা সেতুর মাধ্যমে আগের থেকে বেশি লাভবান হবে।
এছাড়া বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন গড়ে 1 হাজার পর্যটক গিয়ে থাকে ভারতে। এখন ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে সময় লাগে প্রায় 12 ঘণ্টা। যেখানে কিনা ফেরি পারাপার হতে সময় লেগে যায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা। পদ্মা যদতু হলে এই সময়ে প্রায় চার ঘণ্টা কমে যাবে।
। সময় কম লাগার কারণে কলকাতায় বাড়বে বাংলাদেশী পর্যটকের সংখ্যা গাণিতিক হারে। যার জন্য আগের থেকে অনেক লাভবান হবে কলকাতার ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ-ভারতের স্থলবন্দরের ব্যবসা বাণিজ্যের 90% হয়ে থাকে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে। এই সীমান্ত দিয়ে যেসব ট্রাক বাংলাদেশে ডুকত মালামাল নিয়ে। এসব মালামাল পৌঁছাতে হত রাজধানী ঢাকায়। আর ঢাকায় যেতে পারি দিতে হয় পদ্মা নদী।
অনেক সময় দেখা যায় শত শত ট্রাক পদ্মার পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকে ফেরি পাড় হওয়ার আশায়। সারা রাত পার হয়ে যায় কিন্তু সামনের দিকে থাকা ট্রাকগুলো শুধুমাত্র ফেরি পেলেও পিছনে থাকা ট্রাকগুলো ফেরি পারে না। সকাল হলে বেড়ে যায় যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা। যাতে করে ফেরি গুলোতে পন্যবাহী ট্রাকগুলো না উঠিয়্র সুযোগ করে দেয়া হয় যাত্রীবাহী বাস। যাতে করে যাত্রী গুলো দ্রুত ঢাকায় পৌছাতে পারে।
এতে করে একদিন একরাত পদ্মার পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এখনো অনেক ট্রাককে। যখন কিনা পদ্মা সেতু চালু হয়ে যাবে তখন পদ্মা সেতুর কল্যাণে ট্রাকগুলোকে আর দাড়িয়ে থাকতে হবে ন্স ফেরির জন্য । ছয় থেকে সাত ঘন্টায় বেনাপোল থেকে ঢাকায় পৌঁছে যাবে এসব ট্রাক। পদ্মা যেতুর কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে এতে করে ঢাকা-ময়মনসিংহ চট্টগ্রামের অনেক পণ্য কম খরচে পৌঁছে যাবে কলকাতায়।
পদ্মা সেতুর কারনে বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গে অনেক মিল ফ্যাক্টরি গড়ে উঠবে । যে জায়গাগুল্য থেকে আমরা খুব সহজে ভারতে পণ্য বিক্রি করতে পারব এবং ব্যবহার করতে পারব। পাশাপাশি মংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে অন্যান্য দেশে আমাদের পণ্য পাঠানোর পারব আগের থেকে অনেক বেশি।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশের এই অভূতপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন দেখে ভারত ছাড়াও বিশ্বের অনেকগুলো দেশ বাংলাদেশে ব্যবসার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে। সব মিলিয়ে বলা যায় অধ্যুষিত বাংলাদেশ-ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে যাতে করে পদ্মাসেতু হলে শুধু বাংলাদেশ না লাভবান হবে ভারতও। এ বিষয়ে আপনার মতামত কি কমেন্ট করে জানান। ধন্যবাদ