সিলেটে কেন বন্যা হয় | কি কারনে সিলেটে বন্যা হলো

সিলেটে বন্যা হওয়ার কারন কি ? সিলেটে কেন বন্যা হয়

গত 122 বছরের ইতিহাসে সিলেটে বর্তমানে এমন  ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে সেখানে.মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে. মৃত মানুষকে কবর দেওয়ার জায়গাও নেই পানিতে ভাসিয়ে দিচ্ছে আত্মীয়-স্বজনরা.। সেখানে চলাচলের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌকা। এর উপর আবার কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা সেখানে ১০ টাকার মোমবাতির  বিক্রি করছে 100 টাকা আর 1000 টাকার নৌকা ভাড়া  চাওয়া হচ্ছে 50 হাজার টাকা. ৬০ টাকার ১ কেজি চিড়া রাখা হচ্ছে ২০০-৩০০ টাকা। ত্রাণ নিয়ে আসা লোকজন যে হোটেলে থাকবে তার ব্যবস্থাও নেই। কারণ দেড়শ টাকার হোটেল ভাড়া চাওয়া হচ্ছে বিশ হাজার টাকা। এ ভয়াবহ দুর্দিনের মধ্যেও কিছু মানুষ নামের অমানুষ কোথাও কোথাও চালাচ্ছে ডাকাতি। এখন স্বাভাবিক ভাবেই একটা প্রশ্ন আসে ।

 সিলেটে আসলে কি কারনে বন্যা হয়। সিলেটে কেন বন্যা হয় বার বার

মূলত সিলেটে বন্যা হয় একটি কারণে।  আর তা হল ভারত থেকে আসা পানি,  টানা বৃষ্টি ও ভারতের গজলডোবা বাঁধ খুলে দেওয়ায় সুরমা নদীর পানি বিপদসীমা ছাপিয়ে ঢুকে পড়েছে সিলেট সুনামগঞ্জে। আর ভারতের পানির কারণে বাংলাদেশের সিলেটে এমন ভয়ঙ্কর বন্যা দেখা দিয়েছে। ভারতের আসাম মেঘালয় ও ত্রিপুরায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে গত কয়েকদিন আর সেই পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে আর এ কারণেই সিলেটের. এতটা করুন অবস্থা।এবার আশা করি আপনারা একটু ধারনা পেয়েছেন যে মূলত সিলেটে কেন বন্যা হয়

সিলেটে কেন বন্যা হয় ,কি কারনে সিলেটে বন্যা হলো, সিলেটে বন্যা হওয়ার কারন কি ,সিলেটে কেন বন্যা হয় বার বার,সিলেটে আসলে কি কারনে বন্যা হয়,What is the cause of flood in Sylhet 
 
এখন কথা হলো ভারতের পানিতে সিলেটে কেন বন্যা হয়, দেশে তো আরো অনেক এলাকা আছে। আসল কথা হল সিলেট সুরমা নদীর তীরে অবস্থিত। আর সুরমা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় ঠিকমত পানি প্রবাহিত হতে পারছেনা। আর এ কারণেই ভারতের পানি নদীতে আসলেই সিলেটে বন্যা হয়। মূলত ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে গত কয়েকদিন ধরে আর সেই সাথে বৃষ্টিপাত হচ্ছে আমাদের সিলেটেও।  সিলেটে এবার রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টির পানি আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হচ্ছে বাংলাদেশের এই অঞ্চল। এবার আশা করি সিলেটে বন্যা হওয়ার আসল কারন বুঝতে পেরেছেন। সাথে থাকুন সিলেটে বন্যা হওয়ার কারন আরো জানতে পারবেন।

এবার প্রশ্ন হল বৃষ্টিপাত তো কম-বেশী অন্যান্য বিভাগেও হয় তাহলে বৃষ্টি হলেই শুধু সিলেটেই কেন বন্যা হয়। এর পেছনে প্রধান দুটি কারণ উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া। সিলেটের প্রধানতম নদী সুরমার দুইটি রূপ দেখা যায়। প্রতিবছর বর্ষায় এই নদীর পানি উপচে ডুবিয়ে দেয় জনবসতি আর গ্রীষ্মকালে পানি শুকিয়ে পরিণত হয় মরা গাঙে। 

249 কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সুরমা নদী বাংলাদেশের অন্যতম দীর্ঘ একটি নদী। ভারতের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে সিলেট সুনামগঞ্জ নেত্রকোনা কিশোরগঞ্জ এর উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা মিলিত হয়েছে। সুরমা নদী বছরের বেশিরভাগ সময় থাকে পানিশুন্য মৃত। গ্রীষ্ম মৌসুমে মানুষ হেঁটে পার হয় সুরমা নদী।  নদীর তলদেশ পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে । ফলে শুষ্ক মৌসুমে সুরমা হয়ে পড়ে বালু ভূমি। অপরদিকে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই নদী ভরে উপছে পরে দেখা যায় বন্যা। তলিয়ে যায় হাওরের ফসল। 

বর্তমানে ভরাট হয়ে গেছে এই নদীর বেশিরভাগই তলদেশ। সুরমা নদীর 32 কিলোমিটার এলাকার মধ্যে জেগেছে 35 টি চড়। দুই দেশের মাঝখানে হওয়ার কারণে আটকে আছে সুরমা নদীর খনন  কাজ। সুরমা নদী যদি ঠিকমতো খনন করা হতো এবং দুই পাড়ে বাধ দেয়া হতো তাহলে হয়তো এতটা ভয়ঙ্কর অবস্থার সম্মুখীন হতোনা সিলেটবাসী । বাংলাদেশ সরকারও সুরমা নদী খননে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। যার ফলে আজ সিলেটে এতটা ভয়ঙ্কর বন্যা দেখা দিয়েছে । আর যেহেতু সুরমা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে তাই সিলেটে ভারী বৃষ্টি হলে বা ভারতের পানি সুরমা নদীতে প্রবেশ করলে এতটা ভয়ঙ্কর বন্যা দেখা যায় প্রতিবছর। 

সুরমা নদী ছাড়াও ভরাট হয়ে গেছে সিলেটের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী কুশিয়ারা। বর্তমানে সিলেটের সুরমা নদীর মত কুশিয়ারা নদীর তলদেশও ভরাট হয়ে গেছে। বিশেষ করে আমাদের ফেলা বর্জ্য ও প্লাস্টিক নদীর তলদেশ ভরাট করে ফেলেছে। সুরমা ও কুশিয়ারা এ দুই নদী খনন ছাড়া বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

সিলেটে বন্যা ভয়াবহ হবার আরও একটি বড় কারণ হচ্ছে নগরীর জলাশয় ভরাট ও দখল । সাগরদীঘির পাড় লালদিঘিরপার রামের দিঘীরপাড় সহ সিলেট নগরীর অন্তত 20 থেকে 25 টি এলাকার জলাশয় গুলো ভরাট হয়ে গেছে অনেক আগেই। জানা গেছে গত তিন দশকে ভরাট হয়ে গেছে অর্ধশতাধিক দিঘী। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে পনের থেকে বিশ বছর আগে সিলেটে অর্ধশতাধিক দিঘী ছিল। অথচ এখন টিকে আছে মাত্র 10 থেকে 11 টি।  বাকিগুলো ভরাট হয়েছে গেছে। 

 সিলেটে বড় পুকুর আর দিঘি মিলিয়ে তিন শতাধিক দিঘী ছিল। এর বেশিরভাগই ভরাট হয়ে গেছে। অনেক দীঘি ভরাট হয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এছাড়া সিলেট এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ছোট-বড় ২৫টি খাল। এইসব খাল পাহাড় থেকে নেমে গিয়ে মিশেছে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে।  এইসব প্রাকৃতিক খাল দিয়ে বর্ষায় পানি নিষ্কাশন হতো ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না। কিন্তু বর্তমানে বেশিরভাগ খাল ভরাট করে দখল করে নিয়েছে অনেক প্রভাবশালী নেতারা ও এলাকার মানুষজন। খাল  ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে ঘরবাড়ি দোকানপাট। এর ফলে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না যার ফলে ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে সিলেটে। এছাড়াও ভারত থেকে আসা পানি আমাদেরকে আরো বেশি ক্ষতির সম্মুখীন করছে। ভারতের গজলডোবা বাঁধ এর সবগুলো গেট খুলে দেওয়ায় আরো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি।  

আর এই বন্যার কারণে সিলেটের মানুষ আজ বড় অসহায়। বিদ্যুৎ নেই বিশুদ্ধ খাবার পানি নেই মোবাইলে নেটওয়ার্ক নেই । হ্যাঁ এটাই সুনামগঞ্জের বর্তমান অবস্থা । সুনামগঞ্জের আর্তনাদ কি শুনতে পাচ্ছ বাংলাদেশ। ভালো নেই 360 আউলিয়ার পূণ্যভূমি সিলেট। ইতিমধ্যেই পানি উঠে গিয়েছে হযরত শাহাজালাল রহমাতুল্লাহ আলাইহির মাঝারে। পানিতে তলিয়ে গেছে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরও। সিলেটের সাথে সারাদেশের রেল সংযোগ বন্ধ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। 


হযরত শাহজালালের মাজারে ও গলা সমান পানি। 122 বছরের রেকর্ড ভেঙেছে সিলেটের বন্যা । এর আগে কখনো হযরত শাহজালালের মাজারে বন্যার পানি ওঠে নি এমনকি ১৯৮৮ ২০০৪ সালের বন্যা কেও হার মানিয়েছে।  সিলেটের রাস্তাঘাট সব পানির নিচে ডুবে গেছে । চলাচলের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌকা দ্বিতীয় লন্ডন খ্যাত সিলেট শহরে আজ বড় অসহায় । এমন ভয়াবহ বন্যা এর আগে কখনো দেখেনি সিলেটবাসী । সিলেটের অনেক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে । তারা ঠিকমতো দুই বেলা খাবার পাচ্ছে না। অনেক গরু ছাগল পোষা কুকুর বিড়াল বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।  কেউ মারা গেলে তার জানাযা ও ঠিকমতো হচ্ছে না সিলেটে।  একের পর এক লাশ নদীর জলে ভাসিয়ে দিচ্ছে আত্মীয়-স্বজনরা।  সিলেটের মানুষদের জন্য এগিয়ে এসেছে সরকার দেয়া হয়েছে ত্রাণ সহায়তা নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। 

সেইসাথে বাংলাদেশের অনেক সেলিব্রিটিরাও এগিয়ে এসেছে। তারাও যথাসম্ভব ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে।  তারাও এই এলাকার মানুষদের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আর তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন দেশের হাজারো সর্ব সাধারন মানুষ।  তারাও যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী এই এলাকার অসহায় লোকদের সহায়তা করে যাচ্ছেন।  ছেলেটার জন্য শুভকামনা রইল শুভকামনা রইল বাংলাদেশের জন্য। আল্লাহতায়ালা যেন আমাদের এই বিপদ থেকে রক্ষা করেন আমিন। 

আজকে আমি আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি যে, সিলেটে কেন বারবার বন্যা হয়। আপনারা এই পোস্টের মাধ্যমে আশা করি বুঝতে পেরেছেন। আপনার মুল্যবান মতামত কমেন্টসে জানানোর অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ 

অনেকেই সিলেটের ব্ন্যার পরিস্থিতি জানার জন্য নিচের বাক্যগুলো লিখে গুগলে সার্চ করে থাকে।

 

সিলেটে বন্যার কারণ,সিলেটের বন্যা নিয়ে প্রতিবেদন,সিলেটে বন্যা হওয়ার কারণ,সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির ছবি,সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি ২০২২,সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি ভিডিও,সিলেটে বন্যার খবর,সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি আজকের,

 

 সিলেটে কেন বন্যা হয় ,কি কারনে সিলেটে বন্যা হলো, সিলেটে বন্যা হওয়ার কারন কি ,সিলেটে কেন বন্যা হয় বার বার,সিলেটে আসলে কি কারনে বন্যা হয়,What is the cause of flood in Sylhet

 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url