মাছ বৃষ্টি কেন হয় - Rain Fish
আকাশ থেকে ঝাকে ঝাকে নেমে এলো জীবন্ত
মাছ। এই অদ্ভুত অবিশ্বাস্য ব্যাপারটি হন্ডুরাসে হয়ে আসছে প্রায় 100 বছর
ধরে।মধ্যে আমেরিকার একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হন্ডুরাজ। মায়া সভ্যতার
অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিখ্যাত এই দেশটি কয়েক দশক ধরে মানুষের
বিস্ময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। হন্ডুরাসের একটি ছোট শহরের নাম ইউরো।
শতকের মাঝামাঝি কোন এক বছরের মে কিংবা জুন মাসে ইউরো শহরে প্রচন্ড ঝড়
হয়। ভারী বৃষ্টিপাত আর বজ্রপাতের গর্জনে লন্ডভন্ড হয়ে যায় সব। ঝড় থেমে
যাবার পর শহরের লোকজন রাস্তায় বের হয়ে ভারী অদ্ভুত একটি দৃশ্য দেখতে
পায়। জ্বলজ্যান্ত মাছ রাস্তায় লাফালাফি করছে। তাও একটি-দুটি নয় শত শত
মাছ। সেই থেকে শুরু। এরপর থেকে প্রতি বছর অন্তত একবার করে ইউরো শহরে হতে
দেখা যায়।
আজব
এই মাছের বৃষ্টি দেখে সবাই ভাবতো বৃষ্টির তোড়ে আশেপাশের জলাশয় থেকে বুঝি
মাছেরা রাস্তায় চলে আসে। কিন্তু একসময় লোকেরা সরাসরি দেখতে পায় আকাশ
থেকে বৃষ্টির ফোঁটার মতন শত শত মাছ পড়ছে।
থানীয়রা
এই ঘটনাকে বলেন জুভিয়া দে পেতেস স্প্যানিশ এই শব্দটির অর্থ হলো মাছের
বৃষ্টি। মাছবৃষ্টি বলতে একটি-দুটি নয় লাখ লাখ মাছ আকাশ থেকে ঝরে পরে।
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সময়ে রীতিমতো লোক নামিয়ে রাস্তাঘাট
পরিষ্কার করাতে হয়।
ইউরো অত্যন্ত গরীব একটি শহর। যেখানকার লোকেদের একমাত্র খাবার ভুট্টা আর মটর দানা। সেখানে আকাশ থেকে মাছের বৃষ্টি ঈশ্বরের আশীর্বাদ এর চেয়ে কম নয়। রাস্তায় পড়ে থাকা এই মাছগুলো শহরবাসীরা মহানন্দে রান্না করে খায় এবং অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে পরের বৃষ্টির জন্য। কেবল হন্ডুরাসেই নয়। মাছ বৃষ্টি ঘটনার আলামত মিলেছে আরো কয়েকটি দেশে কোনোটিতেই হন্ডুরাসের মত নিয়মিত এমন ঘটনা ঘটে না.
আটলান্টিক মহাসাগর থেকে প্রায় 200 মাইল দূরে এই মাছের বৃষ্টি হয়। অনেকে মনে করেন টর্নেডো বা সামুদ্রিক ঝড় আটলান্টিক মহাসাগরের বিভিন্ন অংশের মাছ উড়িয়ে এই অঞ্চলে ফেলে দেয়। কিন্তু এমন ঘটনা প্রতিবছর কি করে সম্ভব। এখনও এই ঘটনা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। প্রথমদিকে হন্ডুরাসের মাছ বৃষ্টি ছিল সবার কাছে একটি অলৌকিক ঘটনা।
কয়েকবছর
পরে সবাই মনে করতে থাকে এই মাছগুলো পার্শ্ববর্তী জলাশয়ের। কিন্তু কেউ কেউ
মাছগুলোকে দেখে শনাক্ত করে যে এগুলো তাদের এলাকার মাছ নয়। তারা এ ধরনের
মাছ কোথাও দেখে নাই। এটা শেষমেষ এটাই ধরে নেয় যে। এটা সম্পূর্ণ অলৌকিক
ঘটনা।
১৯৭০ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক বিজ্ঞানীদের একটি দল ইউরোর মাছ বৃষ্টির এই ঘটনা একেবারে চাক্ষুষ দেখে।
এসময় আবারও তারা একই ব্যাখ্যা নিয়ে আসে যে মাছগুলো আর যেখানকার হোক না কেন আকাশ থেকে পড়ছে না। মাটিতে পড়ে থাকা মাছ গুলোর উপর গবেষণা চালিয়ে তারা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার লক্ষ্য করেন। মাছগুলো দৃষ্টিশক্তিহীন তার মানে এরা অবশ্যই সমুদ্রের গভীরের মাছ। এত গভীরে যেখানে একদমই আলো পৌঁছায় না।
এরপর এই ঘটনার ব্যাখ্যা
দেওয়া টা বেশ সহজ হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন মাছবৃষ্টি অস্বাভাবিক হলেও
প্রকৃতিতে এটা ঘটে থাকে। যখন কোন বড় নদী ও সাগরের উপর টর্নেডো ঘূর্নিঝড়
সৃষ্টি হয় তখন ঘূর্ণায়মান বাতাস অগভীর নদী সাগরের উপর পানির সংস্পর্শে
আসলে সাগর বা নদী হালকা ওজনের মাছ গুলো পানির সঙ্গে ওই ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে
মিশে গিয়ে উপরে উঠে যায়।
উক্ত
অঞ্চল থেকে আপাতদৃষ্টিতে ঘূর্ণিঝড় থেমে গেছে বলে মনে হলেও তা মূলত অনেক
উপরে ঘুরতেই থাকে। তাছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের ঘূর্ণিবায়ু পানির সঙ্গে মাছ টেনে
নিয়ে তা মেঘ হিসেবে জমা রাখে। আশ্চর্যের বিষয় হলো মেঘমালা এই মাছগুলো বহন
করে হলে উক্ত টর্নেডো ঘূর্নিঝড় মাছগুলো সঙ্গে নিয়ে ঘুরে ঘুরে সাগর বা নদী
নিকটবর্তী অঞ্চলে আসে।
মূলত
ঘূর্ণিঝড় এর ঘূর্ণন বন্ধ হয়ে যায় ফলে মেঘ থেকে বৃষ্টি হয় তখন মাছগুলো
পানির সঙ্গে মাটিতে পড়তে থাকে। এভাবেই ঘটে যায় মাছবৃষ্টি।
যদিও
মাছ টেনে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই জল ঘূর্ণন থেমে যায়। তাইতো শুধু স্থলেই
না এমনকি উক্ত নদী বা সাগরের উপর লও মাছ বৃষ্টি হতে পারে। কম সময়ের মধ্যে
মাছ গুলো পড়ে যায় বলেই কিছু অনেক মাছই জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায়।
2021 সালের শেষে অবাক করা এই মাছ বৃষ্টির সাক্ষী হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সারকানা শহরের অধিবাসীরাও। এছাড়াও 2017 সালে দেশটির ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের অরভিলে এমন ঘটনা ঘটেছিল ওই সময় অরভিল এর একটি এলিমেন্টারি স্কুল ভবনের ছাদে মাছের বৃষ্টি হয়েছিল।
স্কুল
কর্তৃপক্ষ জানায় ওই ঘটনায় স্কুলের মাঠে ও ছাদে শতাধিক মাছ পাওয়া
গিয়েছিল। 2012 সালে ফিলিপাইন ও ভারতেও ঘটে মাছবৃষ্টি এই পর্যন্ত বিশ্বের
18 থেকে 20 টি স্থানে মাছ বৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়।