বিশ্বকাপ জেতার পরেও কেন কাদলেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া
দীর্ঘ 36 বছর পর আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হলো। স্পর্শ পেল ট্রফি নামক সোনার হরিণের। ফাইনাল ম্যাচ শেষে মাঠের মধ্যেই ছোট্ট মেয়েকে কোলে নিয়ে সেই ট্রফি হাতে কাদতে দেখা গেল আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ এনে দেওয়া অন্যতম নায়ক ডি মারিয়াকে। ফুটবল পায়ে আর্জেন্টিনার গতি দানব তিনি। মাঠের ট্রফি হাতে যখন কাঁদছিলেন সবাই হয়তো ভেবেছেন বিশ্বকাপ জেতার আনন্দে কাঁদছেন। আসলে সেদিন ডি মারিয়া জয়ের আনন্দে কাঁদেননি। তাহলে কেন কেঁদেছিলেন তিনি সেদিন। আজকের ভিডিওতে আমরা তুলে আনব ডি মারিয়ার ভেতরের কিছু তথ্য। সেই সাথে আমরা ঘুরে আসবো ডি মারিয়ার সংগ্রামী জীবনের কিছু গল্প কথা থেকে।
কেন কেদেছিলেন ডি মারিয়া
বিশ্বকাপের ফাইনালের দিন খেলা শেষে এক সাক্ষাৎকারে ডিমারিয়া বলেন। আজকাল ইন্সট্রাগ্রাম বা ইউটিউবে দেখে সবকিছু জেনে নেয়া যায়। খেলার ফলাফলও জানা যায় খুব সহজেই। কিন্তু ওর পেছনে কত কত ঘাম আর কত চাপা গল্প কথা লুকিয়ে আছে তা কেউ দেখতে পায়না। মেয়েকে সাথে নিয়ে বিশ্বকাপের ট্রফি সহ ছবি তুলেছি। ছবি দেখে হয়তো সবার ধারণা সবতো ঠিকই চলছে। কোথাও কোন গড়বড় নেই।কিন্তু কেউ জানেনা ওই ছবিটা তোলার ঠিক এক বছর আগে আমার এই মেয়েটাই প্রি ম্যাচিউরড অবস্থায় জন্ম নিয়েছিল। টানা দু মাস মেয়েটা হাসপাতালে ছিল। তার সমস্ত শরীরে লাগানো ছিল তার টিউব। ছবিতে ট্রফিসহ আমাকে কাঁদতে দেখে সবাই ধরেই নিয়েছে আমি জেতার আনন্দে কাঁদছি। ফুটবলের জন্য কাঁদছি। সত্যিটা কি জানেন কেঁদেছি আমার মেয়েটার জন্য। ও আজ বেঁচে আছে আমার সাথে ধরে আছে ট্রফি। আমি কেঁদেছি এই আনন্দে। এ তো গেল জয়ের দিনের গল্প।
একজন কয়লা শ্রমিক থেকে ডি মারিয়া
অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার সংগ্রামী জীবনের গল্প কথা জানলে আরো অবাক হবেন ৷ ডি মারিয়া ছিল একজন কয়লার শ্রমিকের ছেলে । নিজের বাসার পাশেই ছোট্ট একটি কয়লার কারখানায় তাঁর বাবা কাজ করতেন। তার বাবাকে সাহায্য করতেন ডি মারিয়া ও তার বোন। বাবা সারাদিন কয়লা বানিয়ে বিকেলে যদি বাজারে বিক্রি করতে পারতেন তবেই তাদের বাসায় খাবার জুটতো। আর যেদিন কয়লা বিক্রি করতে না পারতেন সেদিন সবাইকেনা খেয়ে থাকতে হতো।ডি মারিয়া ১৯৮৮ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম আনহেল ফাবিয়ান দি মারিয়া এর্নান্দেজ। তিনি জন্ম নিয়েছিলেন অত্যন্ত নিম্নবিত্ত একটি পরিবারে পরিবারের নুন আনতে পান্তা ফুরাত। দি মারিয়ার আরো দুজন ভাই বোন রয়েছে। তিনি ছোটবেলা থেকেই বেড়ে উঠেছেন পাদ্রীইয়াল শহরে।
জন্মের পর থেকেই ডি মারিয়া অস্বাভাবিক রকমের দুরন্ত ছিলেন। তাকে দেখতে কিছুটা রোগা-পাতলা হলেও তার শারীরিক শক্তি ছিল প্রচুর। ছোটবেলায় এত দৌড়োদৌড়ি করত যে তার অতিরিক্ত এই দৌড়োদৌড়ি কে অসুখ ভেবে বসেছিলেন ডি মারিয়ার মা। নিয়ে গিয়েছিলেন ডাক্তারের কাছে। এখানে মজার বিষয় হলো সেই ডাক্তাররা সেদিন ডি মারিয়াকে ফুটবলার হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল।
কিন্তু কিভাবে ফুটবলার হবেন তিনি। যেখানে তাদের সংসারের খাবারই জুটতো না ঠিকমতো। সেখানে আবার ফুটবলার হবার স্বপ্ন। সেসময় ডি মারিয়াকে একজোড়া বুট জুতো কিনে দেওয়াও তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব ছিল না। কিন্তু তার বাবা মা সব সময় তার পাশে ছিলেন। দি মারিয়ার বাবাও একজন ফুটবলার ছিলেন, যিনি রিভার প্লেটের রিজার্ভ দলে খেলতেন। তারা দুজনেই মনে প্রানে চাইতেন ডিমারি একদিন বড় একজন ফুটবলার হয়ে উঠুক। বিশেষ করে তার মা। যার অক্লান্ত পরিশ্রমের কারনেই তিনি আজ ডি মারিয়া।
বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এই মাই তাকে নিয়ে যেতেন ফুটবলের ট্রেনিংয়ে। এ সময় তাঁর সঙ্গী ছিল মা ও তার ছোট বোন। একজন মা ছোট্ট একটা ছেলেকে সাইকেলের পেছনে আর ছোট্ট একটা মেয়েকে পাশে নিয়ে সাইকেল চালিয়ে প্রতিদিন নিয়ে যেতেন। সাইকেলের সামনের ঝুড়িতে কিট ব্যাগ বুট জুত আর কিছু স্নাক্স।
ভয়াবহ এক এলাকা দিয়ে যাওয়া-আসা করতে হতো। ঝড়ের মধ্যে বৃষ্টিতেভিজে কিংবা ঠান্ডায় আলো কিংবা অন্ধকারে পরিবেশ কি রকম থাকতো তাতে মায়ের কিছুই আসতো যেতো না। ছেলে একদিন বড় ফুটবলার হবেন চোখে মুখে ছিল শুধু সেই স্বপ্ন। আর এই স্বপ্ন যেকোন মূল্যেই বাস্তবায়ন করতে চান তিনি। মায়ের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। ডি মারিয়া হয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা নান্দনিক ফুটবলার।
ভয়াবহ এক এলাকা দিয়ে যাওয়া-আসা করতে হতো। ঝড়ের মধ্যে বৃষ্টিতেভিজে কিংবা ঠান্ডায় আলো কিংবা অন্ধকারে পরিবেশ কি রকম থাকতো তাতে মায়ের কিছুই আসতো যেতো না। ছেলে একদিন বড় ফুটবলার হবেন চোখে মুখে ছিল শুধু সেই স্বপ্ন। আর এই স্বপ্ন যেকোন মূল্যেই বাস্তবায়ন করতে চান তিনি। মায়ের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। ডি মারিয়া হয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা নান্দনিক ফুটবলার।