যে ৩টি ভুলে ডুবে গিয়েছিল টাইটানিক

তিনটি ভুলের কারণে টাইটানিক জাহাজ ডুবে গিয়েছিল। এই তিনটি ভুল যদি সাথে সাথে শুধরে নেয়া যেত তাহলে হয়তো টাইটানিক আজও পৃথিবীর বুকে ভেসে বেড়াতে পারতো। যেই জাহাজ কোনদিন তোমার কথা নয় সেই জাহাজ কিনা পানিতে নামানোর পর প্রথম যাত্রাতেই ডুবে গেল। তাও আবার সাধারণ বরফ খন্ডের সাথে ধাক্কা লেগে। তাহলে চলুন আমরা জেনে নেই ঠিক কোন তিনটি ভুলের কারণে ১৯১২ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে টাইটানিক তার প্রথম যাত্রাত্তেই মাত্র সাত দিনের মাথায় ডুবে গিয়েছিল






টাইটানিক নাম টি এখন পুরো পৃথিবীর কাছে একটি দীর্ঘশ্বাসের নাম। টসিটানিক  জাহাজটিকে নামকরণ করা হয় সেই সময়ের গ্রীক সভ্যতার এক শক্তিশালী টাইটান দেবতার নাম অনুসারে। টাইটানিক এর পুরো নাম ছিল আরএমএস টাইটানিক। 

টাইটানিক নির্মাণ কাজ শুরু করা হয় ১৯০৭ সালে। একটানা পাঁচ বছর কাজ করার পর জাহাজটি নির্মানের কাজ শেষ হয় ১৯১২  সালে। জাহাজটি নির্মাণ করেছিল হল্যান্ডের হোয়াট স্টার লাইন কম্পানি। জাহাজটি নির্মান করতে প্রায় ৩০০০ শ্রমিক ও ইঞ্জিনিয়ার দিন রাত কাজ করেছিল আর নির্মান কাজ চলাকালে ২৫০ জনের মত কর্মী মারা যায়। 

২৭৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা জাহাজটির ওজন হয়েছিল প্রায় ৬০ হাজার টন। আর এটি নির্মাণ করতে সে সময় খরচ হয়েছিল প্রায় 75 লক্ষ ডলার। আপনি জানলে অবাক হবেন মাত্র সাত দিনের মাথায় টাইটানিক তার গন্তব্য স্থানে পৌঁছানোর কথা ছিল। এজন্য ১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল সাউদামাপদন থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে জাহাজ টাইটানিক। সে সময় টাইটানিকে 2200 যাত্রী এবং কয়েকশো জন কর্মী ছিল। মাঝপথে ফ্রান্সের চেরবার্গ থেকে আরো ২৪৭ জন এবং আয়ারল্যান্ডের কুইন টাউন বন্দর থেকে আরো ১২৩ জন তৃতীয় শ্রেনীর যাত্রী তুলে নেয় টাইটানিক। এরপর শুরু করে অন্তিম পথের যাত্রা। এবার আসা যাক আসল কথায়।  কোন তিনটি ভুলের কারনে ডুবেছিল জাহাজ টাইটানিক । 

প্রথমে যে ভুলটি হয়েছিল সেটি ছিল জাহাজের ক্যাপ্টেন তার গন্তব্যস্থলে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য প্রথমে জাহাজের গতি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তখন টাইটানিক জাহাজের স্পিড ছিল প্রায় 80 নটিক্যাল মাইল। এটি ছিল টাইটানিক জাহাজের সর্বোচ্চ গতি। এটা ছিল টাইটানিক জাহাজ ডোবার পিছনে প্রথম ভুল

দ্বিতীয় যে ভুলটি ছিল সেটি হলো শুরুতে যখন তারা একটি আইসবার্গ দেখতে পায় তখন ইচ্ছে করলে তারা জাহাজ টি একটু ঘুরিয়্র পাশ কাটিয়ে যেতে পারত। এজন্য কয়েকজন জাহাজের কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল যাতে তারা দূর থেকে সাগরের বুকে কোনো বরফ খন্ড ভেসে থাকতে দেখলে সাথে সাথে যেন ক্যাপ্টেনকে সিগনাল দিয়ে দেয়। কিন্তু ওই কর্মীরা যখন বরফ থেকে দেখতে পায় তখন ওয়ারলেস সমস্যা হওয়ার কারণে ক্যাপ্টেন সেটিকে খুব একটা ভুরুত্ব দেয়নি। আর এই অবহেলার কারনেই জাহাজ টি সেই আইসবার্গের সাথে ধাক্কা। আর তলিয়ে সাগরের গভীরে। 

তৃতীয় যে ভুলটি ছিল সেটা হলো যখন ক্যাপ্টেন নিজেই দেখছিলেন তার জাহাজটি একটি বরফ খন্ডের সাথে ধাক্কা লাগতে চলেছে তখন তিনি চাইলেই বরফখন্ড থেকে যে দূরত্ব ছিলেন সেখান থেকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারতেন। মূলত ক্যাপ্টেনের অতিরিক্ত কনফিডেন্স এর কারনে জাহাজটাকে তিনি এক প্রকার বাধ্য করান ওই বরফ খন্ডের সাথে ধাক্কা লাগাতে।

নিউইয়র্কে প্রকাশিত একটি তথ্য থেকে জানা যায় - ক্যাপ্টেন যখন বুঝেছিলেন নির্দিষ্ট দূরত্বের কিছু আগে বরফের সাথে টাইটানিক টাইটানিক এর ধাক্কা লাগবে তখন জাহাজটির ডানে বা বামে ঘোরাতে পারতেন। তখন কিছুটা হলেও টাইটানিক কে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো যেত। 

কিন্তু যখন ক্যাপ্টেন বুঝতে পারেন টাইটানিককে আর কোনভাবেই বরফ শৈলের সাথে ধাক্কা লাগা থেকে আটকানো যাবেনা। তখন তিনি আর কোন উপায় না পেয়ে হাল ছেড়ে দেন। তিনি যদি একটু সাহস করতেন তাহলে হয়তো বাঁচানো যেত জাহাজ টাইটানিককে। 

টাইটানিক জাহাজটি যখন সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে যায় তখন ছিল রাত ২ টা ২০ মিনিট। তার ঠিক এক ঘন্টা 40 মিনিট পর রাত ৪ টা ১০ মিনিটে সেখানে দি কারপেখিয়া নামের একটি জাহাজ আসে। জাহাজটি থেকে 413 জন যাত্রীকে উদ্ধার করে সকাল আটটার দিকে নিউইয়র্কে দিকে চলে যায়
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url